বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের কালজয়ী এবং বাংলা সাহিত্যের প্রথম সাম্যবাদী চেতনার উপন্যাস ‘মৃত্যুক্ষুধা’। উপন্যাসটির মূল বিষয়বস্তু দারিদ্র্য, ক্ষুধা ও দুর্ভিক্ষের ভয়াবহতার মধ্যে নিম্নবিত্ত মানুষের বেঁচে থাকার সংগ্রাম। ‘মৃত্যুক্ষুধা’ প্রথম ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় সওগাত পত্রিকায় ১৩৩৪ বঙ্গাব্দের অগ্রহায়ণ থেকে ১৩৩৬ ফাল্গুন পর্যন্ত। পরবর্তীতে ১৩৩৭ বঙ্গাব্দের বৈশাখে (১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দে) বই আকারে প্রকাশিত হয়।
উপন্যাসের কাহিনি আবর্তিত হয়েছে কৃষ্ণনগরের চাঁদসড়কের একটি বস্তিকে কেন্দ্র করে। যেখানে এক দরিদ্র মুসলিম পরিবারের জীবনসংগ্রাম, বৃদ্ধা মা, বিধবা পুত্রবধূ ও সন্তানদের দুর্বিষহ বাস্তবতাকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। পাশাপাশি প্রেম, রোমান্টিকতা এবং সামাজিক বিদ্রোহের উপাদানও এতে যুক্ত হয়েছে।
কাহিনিতে প্যাঁকালে নামের এক যুবক ও কুর্শি নামের খ্রিষ্টান মেয়ের প্রেম, আনসার ও রুবির সম্পর্ক পাঠককে নতুন আবেগে নাড়া দেয়। চরিত্ররা কেবল দারিদ্র্য ও শোষণের শিকার নয়, তারা সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধেও বিদ্রোহ করে। নজরুল তাঁর বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকেই এই উপন্যাস রচনা করেছেন। ১৯২৬ থেকে ১৯২৯ সাল পর্যন্ত কৃষ্ণনগরে অবস্থানকালে উপন্যাসটির প্রথমাংশ লেখেন এবং পরবর্তীতে কলকাতায় অবস্থানকালে শেষাংশ সম্পন্ন করেন।
‘মৃত্যুক্ষুধা’কে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ের প্রেক্ষাপটে রচিত ধরা হয়। এতে যুদ্ধোত্তর অর্থসংকট, শ্রেণিবৈষম্য ও নগরচেতনার বাস্তব চিত্র ফুটে উঠেছে। নজরুলের গদ্যের বৈশিষ্ট্য—যমক, শ্লেষ, উৎপ্রেক্ষা ও ধ্বনিময়তা—এই উপন্যাসকে করেছে অনন্য।
কাজী নজরুল ইসলাম মাত্র তিনটি উপন্যাস লিখেছেন—‘বাঁধনহারা’, ‘মৃত্যুক্ষুধা’ ও ‘কুহেলিকা’। এর মধ্যে ‘মৃত্যুক্ষুধা’ তাঁর দ্বিতীয় ও বহুল পঠিত উপন্যাস, যা আজও সুখপাঠ্য হিসেবে বিবেচিত হয়।