নিজস্ব
প্রতিবেদক:
জুলাই
আন্দোলনের সময় আহত হয়ে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে আসা
অনেক রোগী ভয়ে তাদের আসল পরিচয় গোপন করেছিলেন বলে আদালতে জানিয়েছেন হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. জাকিয়া সুলতানা নীলা। সোমবার বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ তিনি
এ সাক্ষ্য দেন। মানবতাবিরোধী অপরাধের এ মামলায় তিন
আসামি হলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন। এর
মধ্যে আব্দুল্লাহ আল মামুন ইতিমধ্যেই
রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী হয়েছেন।
জাতীয়
চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের রেটিনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জাকিয়া বলেন, ১৭ জুলাই থেকে আহত রোগী আসা শুরু করে। প্রথম দিন পাঁচজন রোগী ভর্তি হন, যারা ‘মেটালিক পিলেট’ বিদ্ধ ছিলেন। পরদিন, ১৮ জুলাইকে তিনি
‘রক্তস্নাত দিন’ হিসেবে বর্ণনা করেন।
তিনি আদালতকে জানান, “ওই দিন দুপুরে
খবর আসে হাসপাতালে হঠাৎ অনেক রোগী আসতে শুরু করেছে। জরুরি বিভাগে গিয়ে দেখি ভয়াবহ দৃশ্য—শতাধিক তরুণ আহত, কারও এক চোখ ফেটে
গেছে, কারও কর্নিয়া ছিদ্র, কারও রেটিনা আঘাতপ্রাপ্ত। অনেকে দুই হাতে চোখ চেপে ধরে রেখেছে।”
তার ভাষ্য অনুযায়ী, ওই দিন প্রায়
১০০ জন ভর্তি হন
এবং আরও ৮০–১০০ জন
প্রাথমিক চিকিৎসা নেন। একসঙ্গে ১০টি অপারেশন টেবিলে রাত ১০টা পর্যন্ত অস্ত্রোপচার চলে। পরদিনও একই পরিস্থিতি ছিল।
চিকিৎসক বলেন, এ ঘটনায় তাদের
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মধ্যে ৪৯৩ জন স্থায়ীভাবে এক চোখের দৃষ্টি হারান, ১১ জন দুই চোখেই অন্ধ হয়ে যান, ২৮ জন দুই চোখে গুরুতর দৃষ্টি স্বল্পতায় ভুগছেন এবং প্রায় একশ’ জন আংশিক দৃষ্টি হারান।
তিনি আরও জানান, নিরাপত্তাজনিত ভয়ে অনেকে আসল নাম, মোবাইল নম্বর কিংবা জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য গোপন করেছিলেন। “কেউ কেউ ডাকনাম ব্যবহার করেছেন, কেউ ভুয়া তথ্য দিয়েছেন। তারা আতঙ্কিত ছিলেন।” এ সময় তিনি
আদালতের অনুমতি নিয়ে একটি পাওয়ারপয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে রোগীদের পরিসংখ্যান উপস্থাপন করেন।
এদিন ডা. জাকিয়া সুলতানাসহ পাঁচজন সাক্ষ্য দেন। অন্যরা হলেন জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক ডা. খায়ের আহমেদ চৌধুরী, বাড্ডার ফুচকা ব্যবসায়ী মোহাম্মদ ইদ্রিস, লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী আমেনা আক্তার ও কুমিল্লার হাসনেয়ারা
বেগম। তাদের মধ্যে মোহাম্মদ ইদ্রিস সাক্ষ্যে জানান, জুলাই আন্দোলনে তিনি হারিয়েছেন তার উচ্চমাধ্যমিক পড়ুয়া ছেলেকে। আর হাসনেয়ারা বেগম
হারিয়েছেন তার বাস চালক ছেলেকে।